Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
শাহীন রাড়ীর সাফল্যগাঁথা
ছবি
ডাউনলোড

আমার নাম শাহীন রাড়ী, পিতা : মৃত শামচুল হক রাড়ী, গ্রাম : চর পালরদী, ওয়ার্ড নং : ০৮, ইউনিয়ন : রমজানপুর , উপজেলা : কালকিনি । আমি আমার ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে সর্বপ্রথম ভাসমান বেডে সবজি চাষ সর্ম্পকে জানতে পারি ভাসমান কৃষি আবহমান কাল ধরে বাংলার ঐতিহ্য এবং পরিবেশ বান্ধব কৃষি । পরবর্তীতে তার মাধ্যমে  আমি উপজেলা কৃষি অফিস, কালকিনি থেকে ভাসমান বেডে সবজি চাষ বিষয়ে  প্রশিক্ষণ গ্রহন করি । উক্ত প্রশিক্ষণে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে  আমি ভাসমান বেডে কচুরীপানা দিয়ে সবজি চাষ বিষয়ে  হাতে কলমে ও বিভিন্ন  ধরনের  ভিডিওর মাধ্যমে  প্রশিক্ষণ গ্রহন করি । এরপর বর্ষার মৌসুমে পতিত  জমিতে লম্বায়  প্রায়  ৮০ হাত এ রকম ১৫টি বেড তৈরী করি । এই ১৫টি বেডে  আমি প্রথম হাইব্রীড লাউ (জাত : ডায়নার) চারা রোপন করি । চারা রোপন করার পর  লাউ-এর গাছ হতে প্রচুর পরিমানে  লাউ এর উৎপাদন হয় , কোন ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহার ছাড়াই ।আগে কখনও ভাসমান ধাপে চাষ হতো না, আমার মাধ্যমে শুরু হয়। আমি প্রায় ২২,৬৮০/- (বাইশ হাজার ছয়শত আশি ) টাকা  খরচ করে এর থেকে লাউ বিক্রি করি ৯৫,৭৪০/- ( পঁচানব্বই হাজার সাতশত চল্লিশ ) টাকার। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পর  আর আমাকে  পিছনে ফিরে  তাকাতে হয়নি । পরের বছর আমাকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রদর্শনী দেয় । উক্ত প্রদর্শনীর থেকে  উন্নত জাতের লাউ, শসা , লালশাক ,ঢেড়স ও করল্লার আবাদ  ভাসমান বেডে শুরু করি   এবং আমার ভাসমান বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করি । যার ফলে আমার ভাসমান বেডের সংখ্যা দাড়ায় ২১ টি । আমার ভাসমান বেডের শাক সবজির আবাদ দেখে স্থানীয় সহ বিভিন্ন প্রান্তের কৃষক ভাইয়েরা  ভাসমান বেডে সবজি চাষ করতে আগ্রহী হয়  এবং বর্তমানে  আমার সাথে প্রায় ৪৫ জন কৃষক ভাসমান বেডে সবজি চাষ করছে । 

    ২০১৯ সালে আমার কাছ থেকে শিখে জুলহাস মোল্লা,জলিল বেপারী, সেলিমপেদা, আরজ আলী হাওলাদার, হালিম ঘরামী, আজিজুল পেদা, রেজাউল হাওলাদার,জাকির নলী সবাই ভাসমান কৃষি কাজ ব্যাপকভাবে শুরু করে এবং এভাবে সবজী চাষ আলোচিত হতে থাকে। ২০২০ সালে আমার দেখাদেখি আরোও কৃষক জড়িয়ে পড়ে লাভজনক এ কাজে। এ সবজীর স্বাদ খুব বেশী তাই গৌরনদী বাজারে এ লাউয়ের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায় এবং প্রতিটি লাউ ১০০ - ১১৫ টাকা করে বিক্রি হয়। সবাই বলে ধাপের লাউ এতে কোনো কীটনাশক দেয়া নাই। ২০২১ সালে প্রায় ৫০ জন কৃষক যাদের জমিতে প্রচুর কচুরীপানা আছে কোনো ফসল তেমন ভাল হয় না তা পচিয়ে লাউ, শশা, চিচিংগা, লালশাক, ঢেড়স, করলা চাষ করে খরচ খুব কম হয়েছে ভাল লাভবান হচ্ছি। কৃষকের আরো আগ্রহী হয়ে অন্য জায়গায় নিচু এলাকায় নিজেদের চেষ্টায় আমার সহযোগিতায় এবং কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায়আমরা সকল কৃষককে নিয়ে সামরে দিকে ভাসমান কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।



     মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মত এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সে মোতাবেক যেখানে কৃষকেরা বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধ জমি পতিত অবস্থায় রাখতো সে সকল পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনার জন্য ভাসমান বেড আকারে সবজি ও মসলা উৎপাদন অন্যতম উপায়/ কৌশল। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয় অপরদিকে বালাাইনাশকের প্রয়োগ নাই বলে জনগণের মধ্যে ভাসমান বেডে উৎপাদিত ফসলের চাহিদা অনেক। ভাসমার বেডে সবজি ও মসলা ফসল চাষের গুরুত্ব অনুধাবন করে এখন এলাকার কৃষকেরা যেমন একদিকে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে ঠিক তেমনিভাবে ভাসমান সবজি গ্রাম হিসেবে সকলের কাছে পরিচিতি পেয়েছে। 

    আমাদের এ কৃষি কাজ তেখতে এসেছিলেন রবীন্দ্রশ্রী বড়–য়া, অতিরিক্ত সচিব, কৃষি মন্ত্রনালয়। তিনি পরিদর্শন করে পানির মধ্যে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শসা, করলা, লালশাক সহ নানা ধরণের সবজি উৎপাদন করেছে দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। পরিদর্শন করেন ভাসমান প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মহোদয়, ওগঊউ টিম সহ উপপরিচালক, ডিএই, মাদারীপুর মহোদয় সহ কালকিনি কৃষি অফিস থেকে উপজেলা কৃষি অফিসার, অতিরিক্ত কৃষি অফিসার, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার সহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়াও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ ভাসমান বেডে সবজি উৎাপাদন পরিদর্শন করেন এবং সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। ২০২১ সালে উপজেলা কৃষি অফিস কর্তৃক শ্রেষ্ঠ ভাসমান কৃষি উদ্যোক্তা হই এবং সার্টিফিকেট ও ক্রেষ্ট গ্রহণ করি। পরিবেশ বান্ধব ভাসমান কৃষিতে আমার এলাকায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি যা অত্র এলাকার এক অতি পরিচিত নাম।

সাফল্য লাভ সম্পর্কে তথ্য ও পরিসংখ্যানগত সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন

ক্রমিক নং ভাসমান বেড তৈরির বছর ভাসমান বেড তৈরির খরচ ভাসমান বেডে উৎপাদিত সবজি বিক্রয় (টাকা) লাভ (টাকা)
1 2018 খ্রি. 22680/- 95740/- 73060/-
2 2019 খ্রি. 24898/- 135450/- 110552/-
3 2020 খ্রি. 25214/- 164610/- 139396/-
4 2021 খ্রি. 27306/- 133695/- 106398/-
5 2022 খ্রি. 29250/- 165210/- 135960